TTL Sony Alpha Photo Camp at Kuakata
Wednesday 8 August 2018 7:00 PM Sunday 12 August 2018 7:00 AM
টিটিএল সনি আল্ফা ফটোক্যাম্প শুরু হওয়ার কথা ছিল আগস্টে কিন্তু তারিখ বদলে দিন ঠিক হলো সেপ্টেম্বর ২০ ‘১৮। আগে থেকেই অনেকেই পরিচিত — বন্ধু, বড় ভাই,ছোট বোন এবং সর্বোপরি তারা প্রিয় মুখ। সুদীপ্ত, ফয়সাল ভাই, তুষার’দা, একরাম ভাই, রিয়াসাত, রেমি, হ্যাপি, তামিম ভাই খুব চেনা, একে একে পরিচিত হলাম জেরিন আপু ( আদতে ভাই ), ফাহমি , আনিস ভাই, জুয়েল, জহির ভাই এবং রুবেল ভাইয়ের সাথে। সনি থেকে রবিন জয়েন করেছেন এর মধ্যে, হই হই করে শুরু হলো যাত্রা, বাস অনটাইমে টেকনিক্যাল মোড় থেকে কুয়াকাটার উদ্দেশ্যে।
আরিচা ঘাটে পৌঁছে বিশাল যানের বহর, ফেরি পারাপারের অপেক্ষায় স্বপ্নবাজ ফটোগ্রাফারদের পেটে তখন জ্বলছে ক্ষুধার আগুন, রুবেল ভাই এবং কয়েকজন তো নেমে নেমে পরোটার অর্ডার দিয়ে গেলেন বিভিন্ন দোকানে, কিন্তু সে পরোটা হাতে পাওয়ার আগেই দৌড়ে বাসে উঠতে হলো বার বার, অবশেষে সফলতার মুখ দেখেছিলেন তারা। ফেরীতে বাস ওঠার পর আমরা কয়েকজন গিয়ে দাঁড়ালাম সারেং এর ডেকটায়, সে রাতের চাঁদ যেন আকাশের দোরে হলদেটে রাতবাতি, পাহারায় দাঁড়িয়ে বিষন্ন ! ডেকে কেউ নদীর নীরবতা অনুভবে ব্যস্ত আর কেউ দেয়ালে আলোছায়ার খেলায় মত্ত ! আমি, রেমি আর রিয়াসাত দুষ্টুমির ছলে ছায়া নিয়ে ছবি তুলে ফেললাম। বাস ছুটেছে কুয়াকাটার দিকে, ভোরের আলো ফুটতে তাকিয়ে দেখি বরিশাল পার হচ্ছি, আর দুষ্টু রেমি এক এক করে ছবি তুলছে নিরীহ ঘুমে কাদা ফটোগ্রাফারদের। পৌঁছে উঠলাম পর্যটন হোটেলে, সুদীপ্তের সব কিছু পারফেক্টলি রেডি করা থাকে, মেয়েরা আমরা ৩ জন বেশ আয়েশ করে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যার যার বেডে আধিপত্য বিস্তার করে নিলাম। সৈকতে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নিচে নামার পর ফয়সাল ভাই একটা ব্রিফিং দিলেন সনি ফটোকনটেস্ট এর নিয়মাবলী, ক্যামেরা বিলি ইত্যাদি নিয়ে। ফয়সাল ভাই মানুষটাকে নিয়ে কিছু বলার থেকেই যায়, উনি শুধু খুব ভালো ফটোগ্রাফি করেন না, খুব ভালো বক্তাও, বুঝিয়ে কথা বলেন, রাতে যখন ছবি নিয়ে বসা হতো এমন ভাবে ছবিটা নিয়ে কথা বলতেন, বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতেন, আমার মতো নাদানের মাথায়ও গেঁথে যেতো বিষয়টা। প্রথমদিন পানিতে নামা স্ট্রিক্টলি নিষেধ ছিল, আবদার করে হাঁটু পর্যন্ত ভেজার পারমিশন নিলাম, যেহেতু আমি ছবি তুলছিনা তাই। সবাই হইচই করে চললাম সমুদ্র অভিমুখে, প্রচন্ড বাতাস তখন, বালি দৌঁড়চ্ছে সৈকতময়। যে যার মতো ছবি তোলায় ব্যস্ত হয়ে গেলো, নৌকার প্রস্তুতি,তাদের সমুদ্রে গা ভাসানো, জেলেদের নিত্যদিনের কাজ হতে থাকলো ক্যামেরাবন্দী। রিয়াসাতের ক্যামেরা প্রচন্ড বাতাসের ধাক্কায় লোনাজলে কুপোকাত, বেচারা সব গুটিয়ে তখন মোছামুছিতে মনোনিবেশ করলো। আমি নিজের মতো গুটি গুটি হাঁটুজলে ভিজছি, আর দেখছি সমুদ্রের বিশালতা। প্রতিবার সমুদ্রে এসে দিগন্তে চোখ আটকে যায়, মনে হয় আকাশ আর সমুদ্র যেন প্রেমিক প্রেমিকা,ওই দিগন্তে মিলনের আশায় এগিয়ে চলেছে সম্পর্কের হাত ধরে। আপাতদৃষ্টিতে আমরা ভাবি তারা মিলে গেছে, আদৌ মিলেছে কিনা আমার সে প্রশ্ন থেকে যায় ! ইতিমধ্যে সৈকতে বালির টাইমল্যাপস নিতে শুরু করেছেন তুষার’দা। আরো অনেকেই ধূলোর উড়ানের পিছু পিছু ! আমি, রেমি পোজ দিয়ে ফেলেছি অগুনতি – ক্যামেরায়, কখনো অবশ্য ক্যান্ডিড নিয়েছেন তামিম ভাই। কে যে কার ক্যামেরায় বন্দী তা এক ধাঁধা ! সবাই হেঁটে হেঁটে অনেক দূরে চলে এসেছি , এবার ফেরার পালা। আমি, ফয়সাল ভাই, তামিম ভাই একসাথে ফিরছি, শুরু হলো ধূলোঝড়, সে কি তেজ ! রাগী বাতাসের উল্টো দিকে ফিরতে হচ্ছে রীতিমতো যুদ্ধ করে, চোখেমুখে অন্ধকার দেখছিলাম। অবশেষে এসে উঠলাম রাস্তায়, ডাব খাওয়া তো তখন মাস্ট
দুপুরে সনি’র প্রতীক দা চলে আসলেন, এক স্যুটকেস ক্যামেরা আর লেন্স নিয়ে, Alpha 7R III, Alpha 7R II, Alpha 7S, Alpha 9…….. !!! টেবিল ভরে গেলো মুহূর্ত ধরার অবাক যন্ত্রে ! আমার বারবার এই ক্যামেরাকে অদ্ভুত মনে হয়, সময় তার স্বাভাবিক নিয়মে মানুষ, স্থান, দৃশ্যে আনে পরিবর্তন, আর এই অবাক যন্ত্রটি ধরে রাখা মুহূর্তগুলোকে রাখে অমলিন, স্থির ! দুপুরে লাঞ্চের পর একটু গড়ানোর টাইম পেয়েছিলাম, তারপর সবাই বাইকে রাখাইন পল্লীর দিকে। পথটা এতো সুন্দর, সবুজ ধানের শীষে হাওয়ার মাতাল নাচ, সারিবদ্ধ গাছের পাতায় শনশন তরঙ্গ ধ্বনি ! রাখাইন পল্লীর শুরুতেই একটা বুদ্ধ মন্দির, বিরাট ধ্যানী বুদ্ধ তাতে অধিষ্ঠিত, শান্ত পবিত্র পরিবেশ। রাখাইন পল্লীতে মেয়েরা তাঁতে বুনে চলেছে শাড়ি, আর সেখানেই ছোট ছোট দোকানে বিক্রি হয় সে সব। আমাদের ফটোগ্রাফাররা ক্লিক ক্লিক শব্দে খুব ব্যস্ত তখন সময় ছুঁতে। এবার ফেরার পালা, দারুণ বাতাসে, হঠাৎ বৃষ্টি গায়ে মাখিয়ে বাইকে, সরাসরি সমুদ্র সৈকতে, সন্ধ্যের আলোয় ছবি তুলতে। অসাধারণ কিছু ছবি দুষ্টু মিষ্টি গ্রুপের খুদে সদস্য রেমি আমাকে আর হ্যাপিকে তুলে দিয়েছে। ফয়সাল ভাইয়ের কাছে ফুচকা খাওয়ার বায়না পূরণ হতেই আমরা আবার হোটেলে ফেরত। রাতে চললো সারাদিনের ছবির জমা, জরিপ, বাছ বিচার, এবং অবশেষে প্রজেক্টরে ছবি দেখা আর পর দিনের এস্যাইনমেন্ট নির্ধারণ। এর মধ্যে পিংক কালারের দুটো ৮ জিবি পেন ড্রাইভ পেলেন তামিম ভাই আর রেমি সনির পক্ষ থেকে। অতঃপর রাতে ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে আবার সৈকতে চলে গেলাম আমরা……. আগামী দিনের প্ল্যান করতে করতে।
——- চলবে
—-Author: Ranjana